1. admin@banglarmuktokontho.com : admin :
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়েছে নজিরবিহীন গণহত্যা - বাংলার মুক্ত কন্ঠ
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
সাংবাদিক নির্যাতন-প্রতিরোধ সেলের পরিচালক নির্বাচিত হলেন সাংবাদিক রেজাউল করিম রেজা শীঘ্রই সেনবাগে শুরু হতে যাচ্ছে “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতি পৌর ক্রিকেট লীগ ২০২৫” বন্দি থাকা নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে উদ্ধার! বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুর দুইদিন পার  দাফন নিয়ে সরকার ও পরিবার দ্বন্দ্বে মরদেহ হাসপাতালেই রামপুরহাটের বারমেশিয়া গ্রামে ২৮ আগস্ট নিখোঁজ হয় এক আদিবাসী ছাত্রী বীরগঞ্জে বিএনপি সভাপতি মনজুরুল ইসলাম দিনব্যাপী দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন চট্টগ্রামে কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হলের ভাড়া নৈরাজ্য : বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ! চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকা চকবাজারের বাগদাদীয়া একাডেমির হেফজুল কোরআন বিভাগের সবক দান অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকারে ইউনূসের কণ্ঠে ভয়: শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে স্বীকার করে নিলেন প্রধান উপদেষ্টা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে হামিদুল ইসলাম হামিদের পূজা মন্ডপ পরিদর্শন

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়েছে নজিরবিহীন গণহত্যা

⁨প্রতিবেদক ও সম্পাদকঃ-দৈনিক বাংলার মুক্তকন্ঠ-??
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৫৩ Time View

⁨প্রতিবেদক ও সম্পাদকঃ-দৈনিক বাংলার মুক্তকন্ঠ-??
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়েছে নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে। গণহত্যা ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পরবর্তী নয় মাসে সমগ্র বাংলাদেশে অব্যাহত ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ কিংবা আরো বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত। আফসোসের বিষয় স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এই বধ্যভূমিগুলো অরক্ষিত রয়ে গেছে। অরক্ষিত উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমিগুলো নিয়ে এই ধারাবাহিক রচনা। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করার পর গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে এক নারকীয় গণহত্যা সংঘটিত করে। মূলত স্বাধীনতাযুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরের বাইরে গ্রামবাংলায় যেসব প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে টাঙ্গাইলের গোড়ান, সাটিয়াচড়া ও পাকুল্লা গ্রামের যুদ্ধ অন্যতম। ঢাকা থেকে ৪৭ মাইল উত্তরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নে গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামের অবস্থান। ৩ এপ্রিল পাকিস্তান সেনা বাহিনীর সঙ্গে গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামে ইপিআর, পুলিশ,আনসার,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা,ছাত্র-যুবক, কৃষক ও শ্রমিকদের এক সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে ইপিআরের অনেক বাঙালি সদস্য শহীদ হন। অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাৎপসরণ করার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে গোড়ান,সাটিয়াচড়া গ্রামসহ আশপাশের পাকুল্লা,কাটোরা,জামুর্কী,চুকুরিয়া,ধল্লা, বানিয়ারা,তেঁতুলিয়া,নাটিয়াপাড়া,দোবাইল,কড়াইল, ফতেহপুর,পাটদিঘি,বলটিয়া,করোটিয়া,বয়রা,সবুইল্লা ও অন্যান্য গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন শুরু করে। ইতঃপূর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশকে প্রতিরোধ করতে ইপিআরের ৩৫ জন বাঙালি সদস্য সাটিয়াচড়া গ্রামে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা,ছাত্র-যুবক, কৃষক ও শ্রমিকরা। ২ এপ্রিল রাতে সাটিয়াচড়া এলাকায় ১৩টি বাংকার নির্মাণ করে ৩৫ জন ইপিআর সদস্য ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা এবং রাস্তার দুই পাশের ঝোপঝাড়ের আড়ালে রাইফেল ধারী ছাত্র ও যুবকরা অবস্থান নেন। ইপিআর ও মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে মাত্র ৫০টি রাইফেল,৬টি এলএমজি, ৩টি রকেট লঞ্চার ও ৩টি ২ ইঞ্চি মর্টার ছিল। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই অসম যুদ্ধে তাদের পরিণতির কথা বুঝতে পারলেও দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। ৩ এপ্রিল এক বিশাল গাড়িবহর নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যাওয়ার পথে তারা আশপাশের গ্রামগুলোতে গুলিবর্ষণ করে নিরীহ জনগণকে হত্যা করতে থাকে। অগ্রবর্তী ১৫-২০টি গাড়ি সাটিয়াচড়া গ্রামের কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বাংকারে ও ঝোপজঙ্গলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে এলএমজি,রকেট লঞ্চার ও রাইফেল দিয়ে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির আঘাতে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায় এবং তাদের কয়েকটি সামরিক যান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এমন আকস্মিক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাদের ধারণা ছিল যে, এত বড় বাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা মুক্তিযোদ্ধাদের নেই। আক্রান্ত পাকিস্তানি সৈন্যরা আছিমতলা সেতুর পূর্ব পার্শ্বে তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের আরো প্রায় ১০০টি গাড়ির বহর এসে আগের গাড়িবহরের পেছনে অবস্থান নেয়। অসংখ্য পাকিস্তানি সৈন্য গাড়ি থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে সাটিয়াচড়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মাত্র ৩৫ জন ইপিআর সদস্য ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা সামান্য অস্ত্রের সাহায্যে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হননি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কামানের গোলা ও মর্টার শেলের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ইপিআরের ২৯ জন সদস্য যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন। অবশিষ্টরা বাংকার ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গোড়ান গ্রামে ও ঝোপজঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। তাদের সঙ্গে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে যোগ দেন গ্রামের ছাত্র,যুবক,কৃষক, শ্রমিক। তারা‘জয় বাংলা’স্লোগানে এলাকা প্রকম্পিত করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইপিআর সদস্যদের পাশে এসে দাঁড়ান। যুদ্ধ রূপ নেয় জনযুদ্ধে। কিন্তু পাকিস্তান সেনা বাহিনীর গোলার আঘাতে এবং হেলিকপটার থেকে মেশিনগানের অনবরত গুলিবর্ষণে তাদের মধ্যে অনেকেই শহীদ হন। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এই যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। সেদিনের যুদ্ধ ও গণহত্যায় শহীদ হন প্রায় ৪০০ জন বাঙালি (ইপিআরের ২৯ জন,গোড়ান, সাটিয়াচড়া ও পাকুল্লা গ্রামের ৪৯ জন,অন্যান্য এলাকা থেকে আসা ২৮ জন,নাম না জানা আরো অনেকে)।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ থেমে গেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গোড়ান,সাটিয়াচড়া ও আশপাশের গ্রামের নিরীহ জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তারা গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামবাসীদের গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। সেইসঙ্গে চলে গ্রামের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও নারী নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বৃদ্ধ,নারী ও শিশুরাও। যারা পালাতে সক্ষম হননি তাদের সবাইকেই সেদিন জীবন দিতে হয়েছে। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি,তারা অনেক মৃতদেহ আগুনে নিক্ষেপ করেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যান্য গ্রাম থেকে যারা গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই সেদিন মারা যান। গ্রামগুলোতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো মৃতদেহ। আহতরা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন কিন্তু কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার সাহস পাননি। সবাই প্রাণ বাঁচাতে দিগি¦দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন আর যাওয়ার সময় তাকিয়ে দেখছিলেন কীভাবে তাদের বসতভিটা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। সেদিন প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের তাণ্ডবলীলা শেষে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পালিয়ে যাওয়া গ্রামবাসী সাহস নিয়ে গ্রামে এসে কোনো প্রকারে মৃতদেহগুলো দাফন করার ব্যবস্থা করেন। এক একটি গর্তে ৪-৫ জনকে মাটিচাপা দেয়া হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের গাড়ির আওয়াজ বা গুলির শব্দ শুনলেই গ্রামবাসীরা আবার লুকিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার এসে গর্ত খুঁড়ে লাশ মাটিচাপা দিতে থাকেন। এভাবে ৩ দিনে জানা ও অজানা শহীদদের লাশ দাফন করা সম্ভব হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকা বাসীর কাছ থেকে জানা যায় যে,স্বাধীনতার পর নিজেদের উদ্যোগে এলাকায় ৪টি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু ১৯৮৮ সালের বন্যায় সেগুলো বিলীন হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো শহীদ মিনার নির্মাণ ও শহীদদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তারা আরো জানান যে, বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে গণকবরগুলো শনাক্ত করে সংরক্ষণের আদেশ দেয়া হয়েছিল। এই পর্যন্ত মাত্র ৬টি গণকবর সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কবরগুলো অবহেলিতভাবে পড়ে আছে। ৩ এপ্রিল গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামে সংঘটিত গণহত্যার সঠিক তথ্য যেন বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারে এ জন্য সব শহীদের নামের তালিকা সংরক্ষণপূর্বক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে গোড়ান ও সাটিয়াচড়া যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর দাবি জানান তারা। সৌজন্যেঃ-দৈনিক বাংলার মুক্তকন্ঠ-

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 বাংলার মুক্ত কন্ঠ
সাইট নির্মাণ করেছেন ক্লাউড ভাই