সাক্ষাৎকারে ইউনূসের কণ্ঠে ভয়: শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে স্বীকার করে নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
“ভারত আশা করছে শেখ হাসিনা বিজয়ীর বেশে ফিরবেন” – বক্তব্যে তোলপাড়
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং নিজের সরকারের নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল এখনও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার বক্তব্যে শেখ হাসিনার বিপুল জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতি ভয় ও শঙ্কা ফুটে উঠেছে, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে নিউইয়র্কে মেহেদি হাসানের মালিকানাধীন মিডিয়া কোম্পানি ‘জেটিও’তে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি দাবি করেন, ভারত এখনও আশা করছে যে শেখ হাসিনা বিজয়ীর বেশে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূসের এই বক্তব্য মূলত তার সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তার এই “স্বীকারোক্তি” প্রমাণ করে যে, একটি অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের পর তার সরকার দেশে ও বিদেশে বৈধতা সংকটে ভুগছে।
সাক্ষাৎকারে মেহেদি হাসান ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পেছনে ভারতের স্বার্থ কী? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “ভারত শেখ হাসিনাকে পুরোটা সময় ধরে সহযোগিতা করে আসছে। তারা এখনও আশা করছে, তিনি হয়তো বাংলাদেশে পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে বিজয়ীর বেশে ফেরত আসবেন।”
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, এটি ড. ইউনূসের কোনো ব্যক্তিগত মতামত নয়, বরং এটিই বাস্তবতা। ভারতসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো জানে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের একমাত্র বিকল্প হলেন শেখ হাসিনা। ছাত্র আন্দোলনের নামে যে পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভালোভাবে নেয়নি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও এর পেছনের ষড়যন্ত্র এবং নিরীহ মানুষের প্রাণহানির জন্য কারা দায়ী, তা সুকৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি নিজ সরকারের ধীরগতি এবং জনগণের হতাশার কথাও উল্লেখ করেন, যা প্রমাণ করে যে তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ বলেন, “ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি নিজের দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে ফেলেছেন। তার কথায় স্পষ্ট যে, তিনি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শক্তিকে ভয় পান। ‘বিজয়ীর বেশে ফিরে আসা’র মতো শব্দ ব্যবহার করে তিনি নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন অটুট এবং তার প্রত্যাবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে ড. ইউনূস নিজেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধের কথা বলছেন, আবার তিনিই ভারতের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করছেন। এটি তার দ্বিচারিতা ও রাজনৈতিক অপরিপক্কতারই প্রমাণ।”
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. ইউনূসের এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
তারা বলছেন, ষড়যন্ত্র করে তাদের নেত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানো গেলেও জনগণের মন থেকে মুছে ফেলা যায়নি। ড. ইউনূসের এই “অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি” তাদের বিশ্বাসকে আরও জোরদার করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের স্বার্থে শিগগিরই দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবেন।