যশোরের বাঘারপাড়ায় পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত কিশোরীর হাতে শিশু খুন।
রিপোর্ট মাহাদী হাসান মেহেদী, অভয়নগর থানা আইন সহায়তা কারি সংস্থা
যশোরের বাঘারপাড়ায় ৫ বছরের কন্যাশিশু তাসনিয়া পুকুরে ডুবে না, তাকে যৌন হয়রানির পর মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যা করে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত কিশোরী ইশিতা আক্তার ঋতু (১৯)।
পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডটি নজরে পড়ে ঘাতকের বাবা তহিদুর রহমানসহ পরিবারের বেশ কয়েকজনের। তাৎক্ষণিক নিহত শিশুর লাশ লেপে পেচিয়ে ঘরে একটি টিনের বাক্সে রেখে দেয়। দিন শেষে ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিশুটির লাশ প্রতিবেশি জনৈক রাজ্জাক খাঁর পুকরে ফেলে দেয়।
পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু তাসনিয়া বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের ট্রাক চালক রজিবুল ইসলামের মেয়ে।
আজ রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পিবিআই যশোর ইউনিটের একদল ফোর্স প্রধান অভিযুক্ত ইশিতা আক্তার ঋতু ও তার পিতা তহিদুর রহমান ও নিরু বেগমকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও জনস্মুখ্যে আসামিরা হত্যার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় ইশিতা আক্তার ঋতু (১৯), তার পিতা তহিদুর রহমান, ঘাতক ঋতুর মা নিরু বেগমকে (৪২) আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলা নং-৯। এরআগে ২০ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হতভাগী তাসনিয়ার পিতা রজিবুল ইসলাম বাঘারপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। বাঘারপাড়া থানা অপমৃত্যু মামলা নং-২৬/২৪১৬। যা ধারা-৩০২ পেনাল কোড তৎসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংঃ-০৩) এর ৯(২)/৩০ রেকর্ড করা হয়েছে।
পৈশাশিক ও নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু তাসনিয়ার পিতা রজিবুল ইসলাম জানান-তিনি পেশায় ট্রাক চালক। ২০ সেপ্টেম্বর তার ছোট শিশুকন্যা নিখোঁজের খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি ও তার চাচাতো দুলাভাই কিয়ামত আলীসহ পরিবারের লোকজন রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে হদিশ মেলাতে ব্যর্থ হন। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিবেশি আব্দুর রাজ্জাকের পুকুরে তাসনিয়াকে ভাসতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় মেয়েটি উদ্ধার করে থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। তাদের ধারণা জন্মেছিল পানিতে ডুবে তাসনিয়ার মৃত্যু হয়েছে। যেকারণে ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চান। কিন্তু সুরোতহাল রিপোর্ট করার সময় পুলিশের সন্দেহ হয়-পুকুরে ডুবে না, মেয়েটিকে কেউ হত্যা করেছে। থানার ওসি আব্দুর রাকিবের নির্দেশে লাশটির ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশের ভাষ্যমতে-ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে যৌন হয়রানি, মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে।
বিষয়টি জানতে পেরে পিবিআই যশোর ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মোঃ মোস্তফা কামাল (ডিআইজি (সিআরও-পূর্বাঞ্চল) এর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশের সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নিদের্শনায় পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মীর রেজাউল হোসেন, এসআই স্নেহাশিস দাশ, এসআই (নিঃ) ডিএম নুর জামাল হোসেনসহ একদল ফোর্স অভিযানে নেমে আসামিদের গ্রেফতার করেন।
প্রধান ঘাতক ইশিতা আক্তার ঋতু স্বীকার করেন তিনি পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত। তিনি মোবাইল সেক্স ভিডিও দেখছিলেন। এ সময় তাসনিয়া তার ঘরে ঢুকলে তাকে কাছে ডেকে অশ্লীল ভিডিও দেখায়। এক পর্যায়ে শিশুটির যৌনাঙ্গে ইশিতা আক্তার ঋতু আঙুল দিয়ে যৌনসুখ উপভোগ করছিলেন। এ সময়ে শিশু তাসনিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ভয় পেয়ে যায় ঋতু। এক পর্যায়ে লোহার শাবল দিয়ে প্রথমে তার মাথায় আঘাত করে। এরপর গলাচেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
ঘাতক ঋতুর পিতা ও মা নিরু বেগম বিষয়টি টের পেয়ে তারাও ভয় পেয়ে যান। তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘরে রক্ষিত প্লেনশিটের বাক্সের মধ্যে লেপ পেঁচিয়ে গোপন করে রাখে। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাসনিয়ার লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশি জনৈক রাজ্জাক খাঁর পুকরে ফেলে আসে।
পিবিআই ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে আসামিরা জনসম্মুখ্যে এভাবেই হত্যার বর্ননা দেন।
যারপ্রেক্ষিতে আসামিদের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমালী আদালত সোপর্দ করা হয়েছে। বিচারক আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।