1. admin@banglarmuktokontho.com : admin :
বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার পতন, এরপর পাকিস্তানেও শুরু হয়েছে গণ আন্দোলন, - বাংলার মুক্ত কন্ঠ
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
ঠাকুরগাঁওয়ে কবরের পাশে থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, গ্রেফতার — ৩ জন । ঠাকুরগাঁওয়ে আ:লীগ অফিস দখল, ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো– সংবাদ সম্মেলনে –রায়হান অপু ,, তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে বিএনপি নেতা হামিদ দিনাজপুরে উঠতে শুরু করেছে বোরো ধান। শুরুতেই ধানের বাজার নিয়ন্ত্রনে ব্যবসায়ীরা। ইএলজিডি সড়ক পাকা (আর সি সি) ঢালায় পরিদর্শন ও উদ্বোধন সিএমপির চান্দগাঁও থানার বিশেষ অভিযানে আটক-০৮ চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের উপর হামলার পর উল্টো ২৭ সাংবাদিকের নামে মামলা : সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিন্দা ও প্রতিবাদ ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলের সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি আটক । ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ অফিস দখলে নিল জুলাই যোদ্ধারা ! ঠাকুরগাঁওয়ে শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন !

বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার পতন, এরপর পাকিস্তানেও শুরু হয়েছে গণ আন্দোলন,

সৈয়দ নুর আলম বাদশা প্রকাশক ও সম্পাদকঃ দৈনিক বাংলার মুক্তকন্ঠ সংবাদ।
  • Update Time : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১১৪ Time View

বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার পতন, এরপর পাকিস্তানেও শুরু হয়েছে গণ আন্দোলন

সৈয়দ নুর আলম বাদশা
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ
দৈনিক বাংলার মুক্তকন্ঠ সংবাদ।

বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার পতন, এরপর পাকিস্তানেও শুরু হয়েছে গণ আন্দোলন, সেই সাথে চলছে পাকিস্তানেও৷ মিয়ানমারেও চলছে সহিংসতা। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে একসাথে কেন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে? বিষয়টি মেলানোর জন্য আমাদের মোটামুটি ১৪ বছর পূর্বের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে৷ আমরা কোন পথে হাঁটছি সেটা অনুধাবন করতে হবে। নিজেদের দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব যেনো হুমকির মুখে না পড়ে সেটার জন্য কি করতে হবে সেই ভাবনা ভাবার সময় এসে গেছে এখনই। আর কাল বিলম্ব নয়। তবে চলুন জেনে আসি কি ঘটেছিলো আজ থেকে মোটামুটি ১৪ বছর পূর্বে?

তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলী বউকুজিজি। পেশায় ফল ব্যবসায়ী। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে চাহিদামতো চাকরি না পেয়ে তীব্র হতাশায় ভুগছিলেন। প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ সালে প্রকাশ্যে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মাহুতি দেন। তার এই ব্যতিক্রম প্রতিবাদ, সর্বোচ্চ ত্যাগ তিউনিসিয়ার তরুণ প্রজন্মকে উত্তাল করে তোলে। তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হয় গণআন্দোলন। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তিউনিসিয়ার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তিউনিসিয়ার জনগণের এই সাফল্য সমগ্র অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে আরববিশ্বের অগণতান্ত্রিক দেশসমূহে। এই গণআন্দোলন সহসাই বিস্ফোরিত হয় ইয়েমেন, মিসর, লিবিয়া এবং বাহরাইনে। গণপ্রতিরোধের মুখে ইয়েমেনের শাসক দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু তার আগে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ হতাহত হয়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মিসরে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের মুক্তির মধ্যদিয়ে মিসর বিপ্লবের ফল অন্তঃসারশূন্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে বাহরাইনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা সরকারের ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেয় গণ আন্দোলন। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বাহরাইন সরকারের পতন প্রায় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ে সৌদি আরব নিজের আদর্শিক মিত্র বাহরাইনকে রক্ষায় সেখানে সেন্য পাঠায়। বস্তুত সৌদি সেনা হস্তক্ষেপে বাহরাইনের রাজতান্ত্রিক সরকার আপাতত রেহাই পায়। কিন্তু বাহরাইনে গণঅসন্তোষ এখনো বিদ্যমান। যেকোনো মুহূর্তেই সেখানে আবারও গণবিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে।

হ্যাঁ এগুলো যা বলছিলাম তা হলো “আরব বসন্তের” ইতিহাস।

পর্যায়ক্রমে আরব বসন্তের ঢেউ লাগে লিবিয়াতে। লিবিয়াতে আন্দোলন ছড়ায় ব্যতিক্রম পন্থায়। সম্পদশালী দেশ লিবিয়ার জনগণ কর্নেল গাদ্দাফির শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন না। দেশটির অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার এই চিত্র আরব বসন্তের অন্তরালের কুশীলবদের জানা ছিল। যে কারণে মুষ্টিমেয় লিবিয়ান জনগণকে সশস্ত্র প্রক্রিয়ায় আন্দোলনে নিযুক্ত করা হয়। লিবিয়ায় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে সামরিক উসকানির প্রকাশ্য প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে লিবিয়ায় বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এই সশস্ত্র গ্রুপসমুহের এলোপাতাড়ি কর্মকাণ্ড শেষ পর্যন্ত লিবিয়াতে ন্যাটোর সামরিক হস্তক্ষেপের পথ পরিষ্কার করে। অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক মতামত উপেক্ষা করে লিবিয়া আক্রমণ করে বসে ন্যাটো জোট। এর মধ্যদিয়ে গাদ্দাফির পতন ঘটলেও লিবীয় জনগণ কি মুক্তি পেয়েছে? খুব পরিষ্কারভাবে বলা যায়, লিবীয় জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি আরব বসন্ত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের অভিপ্রায় পূরণ হয়েছে ঠিকই।
জ্বালানিসমৃদ্ধ লিবিয়ার জাতীয় সম্পদে মার্কিন কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লিবিয়ায় রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংসের মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমীকরণে মার্কিন আধিপত্য শক্তিশালী করেছে। লিবিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল আঞ্চলিক সামরিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকায় মার্কিন সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বাপর আকাঙ্খা বাস্তবায়নের পথ প্রসারিত হয়। ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত মার্কিন সামরিক উপস্থিতিকে বাস্তবসম্মত করে। এই প্রক্রিয়া কার্যত আরবদের অবশিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাও দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। যদিও পরবর্তীতে সিরিয়ায় রুশ সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলে আঞ্চলিক সামরিক সমীকরণে ভারসাম্য ফিরে আসে। অবশ্য এর আগেই আরব বসন্তের দাবানল সম্প্রসারিত হতে থাকে লেভান্ট অঞ্চলে। বহু ঘটনার ভেতর দিয়ে “আরব বসন্ত” অবশেষে তার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা খুঁজে নেয়। অর্থাৎ ২০১১ সালের মার্চেই আরব বসন্তে আক্রান্ত হয় মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সিরিয়া। মজার বিষয় হচ্ছে সিরিয়াতেও প্রথমে অতি সামান্য সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় সিরিয়ার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সকল বিদ্রোহীদের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও তুরস্ক। উপরোক্ত দেশসমূহ ছাড়াও কয়েকটি ইউরোপীয় এবং আঞ্চলিক দেশের প্রত্যক্ষ মদদে বিদ্রোহীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সিরীয় বিদ্রোহীদের ক্রমাগত সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে দেশটির সার্বভৌমত্বই প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই সেখানে আবির্ভূত হয় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
ভয়ঙ্কর আইএসের বর্বরতা লেভান্ট অঞ্চলের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়। ফলে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট হয় আরো ঘনীভূত হয়। পরিস্থিতির সুযোগে আইএস দমনের কথিত তৎপরতায় অংশ নেয় মার্কিন মিত্রজোট। একদিকে মার্কিন মিত্রজোটের বিমান হামলা অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সব মিলিয়ে সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ দ্রুতই শিথিল হয়ে পড়ে। যদিও দেশটির সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করছে। অন্যদিকে কৌশলে সিরীয় সরকারি বাহিনীর শক্তির উৎস ভেঙে দিতে এখনো সচেষ্ট মার্কিন মিত্রজোট। সিরিয়া সঙ্কটের বহুমাত্রিক সমীকরণের ফল হিসেবে লেভান্ট অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিচরণ নির্বিঘ্ন হয়। ফলে সাধারণ জনজীবন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে। এ পর্যায়ে বহু পরস্পর বিরোধী গ্রুপের সামরিক সক্রিয়তায় আসাদ সরকারের পতন প্রায় অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়াকে রক্ষায় এগিয়ে আসে মিত্র রাশিয়া। রুশ সামরিক হস্তক্ষেপ সিরিয়া সরকারকে শক্তি জোগায়। রুশ সহায়তায় সিরিয়া নিজের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। এই বাস্তবতা কার্যত সিরিয়াবিষয়ক মার্কিন অভিসন্ধি তীব্র হোঁচট খায়। এর চেয়েও বড় সত্য হলো দামেস্ক কার্যত এখনো রক্তাক্ত, প্রতিদিন কোনো না কোনো পক্ষের মানুষ মারা যাচ্ছে। এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে সিরীয় জনগণ। তখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিবাসী সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে “আরব বসন্ত”। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওই অঞ্চলের শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়েছে “আরব বসন্ত।”
গণতন্ত্র, উন্নত নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে সত্যিকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট দেশের সামগ্রিক উন্নয়নই ছিল আরব বসন্তের মূল আবেদন। জীর্ণ, অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকদের বিদায় করে অর্থনৈতিক মুক্তি, মানবাধিকার সুরক্ষার মাধ্যমে নিজ মাতৃভূমির মানুষদের জীবন ও ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু অন্তরালের কুশীলবদের নানামুুখী চক্রান্ত আরব জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাশার গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। কোথাও কোথাও পুরনো শাসকদের বিদায়ঘণ্টা নিশ্চিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসেনি কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি। তরুণদের কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। উপরন্তু আইএস নামক ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠীর আবির্ভাব আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে সীমাহীন নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। এক সিরিয়া সঙ্কটেই প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের দায় সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী, সিরীয় বাহিনী এবং তাদের আন্তর্জাতিক মিত্ররা কি এড়িয়ে যেতে পারবে? কিছুতেই না। এখানে ক্রিয়াশীল সব পক্ষই প্রকাশ্যে বা গোপনে যুদ্ধের কৌশলই আঁটছে হীনস্বার্থে।

আসুন এবার হিসেব মেলানোর পালা “আরব বসন্তে” আসলে কে কতটুকু পেলো? সেই লাভ ক্ষতিই দেখে আসি।

তিউনিসিয়া: আরব বসন্তের ফলে তিউনিসিয়া কী পেল—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলছে, বেন আলীর পতনের পর দেশটি একটি নতুন সংবিধান পেয়েছে। দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট’। তবে আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষ চরমভাবে হতাশ হয়েছে। আন্দোলনের সময় কর্মসংস্থানের দাবিটি বেশ জোরালো ছিল। কিন্তু দেশটিতে ২০১৪ সালে বেকারত্বের হার ১৬ শতাংশ ছিল বলে জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় বলছে। কাজ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত ভাবছেন দেশটির তরুণেরা। তাঁদের বক্তব্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের যে দাবি তাঁরা করেছিলেন, শাসকেরা তা উপেক্ষা করছে। দারিদ্র্য, আর্থিক বঞ্চনা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেক তরুণই দেশ ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস)। বেকারত্বের অভিশাপে জড়িয়ে পড়ছেন সন্ত্রাস-দুর্নীতিতে।

বাহরাইন: দেশটিতে আরব বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আন্দোলনের মুখে সরকার তখন তাৎক্ষণিক কিছু সংস্কারের কথা জানায়। এতে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের গদিচ্যুত হতে হয়নি। দেশটির ব্যাপারে অ্যামনেস্টি বলছে, আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছেই। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দমন-পীড়নের নানা অভিযোগ তুলে তা তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এমন দাবির মুখে দেশটির বাদশাহ স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা জানানো হলেও দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মিসর: ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুমুল গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় আন্দোলনকারীদের দমনে ব্যাপক ধর-পাকড় চালান। অ্যামনেস্টির মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তখন অন্তত ৮০০ আন্দোলনকারী নিহত হন এবং ছয় হাজারের বেশি লোক আহত হন। মোবারকের পতনের পর দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসি। তবে গণতন্ত্রের সেই ধারাবাহিকতা আর থাকেনি। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনা-সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হন সাবেক সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
সিসির ক্ষমতায় আরোহণকে কেন্দ্র করে আবার উত্তাল হয়ে ওঠে মিসর। তবে বেশ শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেন সিসি, হয়ে ওঠেন খানিকটা প্রতিশোধপরায়ণ। মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে বন্দী করা হয়। এসব বন্দীর মধ্যে শত শত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় আছেন দেশটিতে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিও।

লিবিয়া: ২০১১ সালে দেশটির তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ওই বছরের অক্টোবরে তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর দেশটিতে অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এখন এখানে চলে—জোর যার মুল্লুক তার নীতি। দেশটিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থাসহ সবকিছু ভেঙে পড়েছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অন্তত ২৫ লাখ মানুষের ভাগ্যে এমনটা ঘটেছে বলে দাবি অ্যামনেস্টির।

সিরিয়া: প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের মার্চে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত দেশটিতে চরম বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে, উত্থান ঘটিয়েছে সশস্ত্র নানা গোষ্ঠীর। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উত্থানে দেশটির এই অবস্থা অনেকটাই ভূমিকা রেখেছে। আইএস ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ে নিজেদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। নানা জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালানো আইএসকে দমন এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতির একমাত্র আলোচ্য বিষয়। বলা চলে, সিরিয়াকে ঘিরেই চলছে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি। প্রথম দিকে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল বিদ্রোহীরা। পরে সেই লড়াই সরকার-বিদ্রোহী-আইএস—এমন ত্রিমুখী পরিণতি পায়। আইএসকে দমনে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার বাসার সরকারের পক্ষ নিয়ে আইএসকে দমনে দেশটিতে বিমান হামলা করছে রাশিয়া। জাতিসংঘ বলছে, বাসারবিরোধী লড়াইয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এক কোটি ১০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ৭৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ভেতরেই অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছ। সিরিয়ার ৪০ লাখ নাগরিক জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে আছে। অনেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছে। আইএস ও শরণার্থী-বিষয়ক সাম্প্রতিক বিশ্বের আলোচিত সমস্যার মূলে তাই উল্লেখ করা হচ্ছে সিরিয়ার সংকটকে।

ইয়েমেন: আজীবন ক্ষমতায় থাকার মনোবাসনা নিয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেন। প্রতিবাদে জনতা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে গিয়ে ওই বছরের মার্চে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়। সরকারের দমন-পীড়নে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। ২০১৪ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সালেহ এখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন। দেশটিতে উত্থান ঘটেছে হুতি বিদ্রোহীদের, যাদের দমনে সালেহ সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশটিতে সৌদি নেতৃত্বে হুতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

যেসব দেশে আরব বসন্ত এসেছিল পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে, সেসব দেশে কার্যত কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। বিভেদ-সংঘাত আরও বেড়েছে, বেড়েছে জনগণের হতাশা ও রক্তপাত।

প্রশ্ন হচ্ছে, আরব বসন্ত কী দিল আরবদের? যে লক্ষ্যে আরব তরুণরা জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল তার ফল কী দাঁড়াল? এই প্রশ্নের উত্তর আছে শুধু আরব নেতৃত্বের কাছেই। এর উপযুক্ত উত্তর একদিন আদায়ও করবে আরব জনগণ। কিন্তু যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, আঞ্চলিক বিভাজন, সীমাহীন রক্তপাত ঘটল আরব বসন্তে তা কি পোষানো যাবে?

এবার প্রশ্ন হলো ভারতীয় উপমহাদেশেও কি আরেক আরব বসন্ত ঘটতে চলেছে? শুধু সময়ের অপেক্ষায় ফলাফল দেখবার।

এখনও সময় আছে ফিরে আসার৷ সমস্ত আন্দোলন পরিহার করে নিজেদেরকে আবারও নিজেদের মতো গুছিয়ে নিতে হবে। মার্কিন মুলুক যেনো উপমহাদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসতে না পারে৷ আমাদের অবস্থা যেনো তিউনিসিয়া, বাহারাইন, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়ামেন ইত্যাদি দেশের মতো না হয়। এখনও সময় আছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসো যার যার নিজ মাতৃভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 বাংলার মুক্ত কন্ঠ
সাইট নির্মাণ করেছেন ক্লাউড ভাই