
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা নওগাঁ ২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট )। সম্প্রতি এই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দীর্ঘ্যদিনের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসনটিতে বিএনপি থেকে মো: সামসুজ্জোহা খানকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের পর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূল লড়াই জমে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি এরই মধ্যে ২৩৭ টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁর এই ধামইরহাট ও পত্নীতলা আসনটি। তবে প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরপর এই আসনে জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় অনেক জামায়াত কর্মীদের আলহামদুলিল্লাহ লিখে পোষ্ট দিতেও দেখা গেছে।
স্থানীয় বিএনপির কর্মীদের মতে, এই মনোনয়ন ঠিক মতো না হলে সুবিধা ঘরে তুলতে পারে জামায়াত। স্বাধীনতার পর থেকেই এই আসটিতে ৩ বার বিএনপি থেকে এমপি হয়েছেন সামসুজ্জোহা খান। তার সময়টি ছিলো খুব ভয়াবহ। মানবপাচার, নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, মামলা বানিজ্য, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা অতীতের এই এমপি সামসুজ্জোহা খানের সময় হয়নি। সর্বশেষ পাঁচ আগষ্টের পর থেকে তিনি ও তার স্ত্রী সরাসরি এরং তার পকেট কমিটির দোসরদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয় দিয়ে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা কামিয়েছেন।
তাছাড়া বর্তমানে তিনি একজন ঋণখেলাপী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও দলমত নির্বিশেষে সকল ভোটারা বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
বর্তমান বিএনপির তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক দূর্বলতার সুযোগে জামায়াত স্থানীয়ভাবে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরী করছে। আসন্ন নির্বাচনে যার সুফল ঘরে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের লড়াইয়ে টিকে থাকতে যে পরিমাণ দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে দেখাতে না পারলে আসন হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপিকে ঘায়েল করতে নিজেদের শক্তিশালী প্রচারণার কৌশল কাজে লাগাচ্ছে জামায়াত। তারা বিএনপির প্রার্থীর নানান দূর্বলতা এলাকার মানুষের কাছে তুলে ধরছে। যার ফলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, নারী ও তরুণরা বিএনপি প্রার্থী থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আর এর সাথে বিরোধী শিবিরের প্রচারণা যোগ হলে তো পাল্লা অন্য দিকে হেলবেই বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলে দীর্ঘ্যদিন ধরে নির্যাতিত ও নিপীরিত অবস্থায় থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এই আসনের বিএনপির তৃণমূলের কর্মী ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ক্লিন ইমেজ থাকলে যে কেউ এই আসনে বিএনপির মনোনয়নে বেশ ভালো ফল করতে পারতেন। পাশাপাশি নারী ও তরুণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন কেউ হলে আরও ভালো হতো। তবে, প্রার্থীকে একই সাথে জামায়াতের প্রার্থীও বিপক্ষে শক্তভাবে লড়াই করার স্বামর্থ্যও থাকতে হবে। সবমিলিয়ে বলা চলে, প্রার্থী বাছাইয়ে কোন প্রকার ভূল থাকলে আসনটি জামায়াতের কাছে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
বলা চলে, নওগাঁ ২ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন জামায়াতকে উজ্জীবিত করলেও, এটি দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেনএই আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা।