
ইউনুস সরকারে অবৈধ ট্রাইবুনাল ও ক্যাংগারু কোর্টের প্রতিহিংসার বিচার প্রতিহত করতে ১৩ নভেম্বর লকডাউন
বর্তমান সময়ে অবৈধ ট্রাইবুনাল ও ক্যাংগারু কোর্ট দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য এক গভীর উদ্বেগের সংকেত। এই ধরনের বিচারব্যবস্থা স্বতন্ত্র বা সুষ্ঠু নয় বরং রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রহসনের জন্য পরিচালিত হয়। ন্যায় ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার বদলে এখানে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন ও প্রদর্শনধর্মী রূপ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাংগারু কোর্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো আনুষ্ঠানিক আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করা। এখানে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার কোনো লক্ষ্য থাকে না বরং ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রতিশোধকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ৭১-এর ইতিহাসকে আড়াল করে এই প্রক্রিয়া প্রায়শই জাতির নৈতিক ভিত্তি ও জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করে।
এই ধরনের প্রহসনমূলক বিচার দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি। এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং রাষ্ট্রের নৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তিকে দুর্বল করে। যখন বিচার নিপীড়ন, প্রতিশোধ বা স্বার্থের খেলা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সাধারণ মানুষের জীবনে নিরাপত্তা ও ন্যায়ের ওপর আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়।
এখানে আসে ১৩ নভেম্বরের লকডাউনের প্রতিফলন। এটি কেবল একটি কর্মসূচি নয়; এটি আমাদের হৃদয়ে তুলে দেয় এক গভীর প্রশ্ন—দেশের নিরাপত্তা, ন্যায় এবং মানুষের মর্যাদা আমরা কতটা রক্ষা করতে পারছি। শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে, শিক্ষকের ক্লান্ত পায়ে, কৃষকের হাতের কঠোর পরিশ্রমে এবং ব্যবসায়ীর দিনের পর দিন লড়াইয়ে গড়ে ওঠা এই বাংলাদেশ আজ অনিশ্চয়তার তলে নেমেছে। প্রশাসনের স্বচ্ছতা হারিয়েছে, ন্যায়বিচার বন্ধনহীন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তা প্রশ্নবিদ্ধ।
শুধু ভয় আর নীরবতা যথেষ্ট নয়। ইতিহাসের সাক্ষ্য আমাদের বলে—যখন মানুষ সজাগ হয়, তখনই দমন, অন্যায় ও দুর্নীতি স্তব্ধ হয়। কিন্তু অনাস্থা ও উদাসীনতার ছায়া পড়লে ক্ষমতার অপব্যবহার অবারিত হয়। তাই প্রয়োজন চেতনার জোয়ার, মানবিকতার দীপ্তি, যা প্রতিটি মানুষের মনে আলো জ্বালাতে পারে।
লকডাউন কেবল রাজনৈতিক নির্দেশ নয়; এটি মানুষের হৃদয়ের প্রতিফলন, সচেতনতার এক সুর। ন্যায় যদি হারায়, ক্ষতি হবে শুধু অর্থনৈতিক নয়; ক্ষুণ্ণ হবে স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং বিশ্বাস। তথ্যভিত্তিক দৃষ্টি, বিচক্ষণ বিশ্লেষণ ও মানবিক চেতনা অপরিহার্য। সমাজ, ন্যায়বিচার এবং সাধারণ মানুষের মর্যাদা রক্ষার জন্য এই সতর্কতা অপরিহার্য।
শেষ পর্যন্ত, দেশের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি হলো মানুষের সচেতন চেতনা। দেশের মানুষ ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল, ন্যায়নিষ্ঠ ও নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হবে,ভয় নয়, জাগ্রত চেতনা; দমন নয়, ন্যায়ের ডাক। আজ যদি আমরা হৃদয় খুলে, চেতনার আলো জ্বালাই, তবে এই দেশ আবার আলো, আশা ও মর্যাদায় ভরে উঠবে।