গত ৯ মাসে ৩০ জন কন্যা শিশু নির্যাতিত
সাগর হাসান
জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী।
কাগজে-কলমে দেশে বাল্যবিয়ে কমলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। অনেক ক্ষেত্রে কিশোরীদের বয়স বেশি দেখিয়ে বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা। অথচ অভিভাবক, স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকার যথাযথ ও কঠোর হলে কিশোরীরা এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কন্যাশিশুর উন্নয়নে নানা স্লোগান প্রচারিত হলেও সমাজে তার প্রভাব পড়ছে না তেমন। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যে এবং অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্র ও পরিবার থেকে নেই পর্যাপ্ত বিনিয়োগও। এ অবস্থায় “ কন্যা শিশুর স্বপ্ন গড়ি আগামীর বাংলাদেশ”’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে না বসে কন্যাশিশুরা যাতে তাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারে, সেজন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট প্রকল্প থাকা দরকার। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন নেই।
রাজশাহীতে গত ৯ মাসে ৩০ জন কন্যাশিশু নির্যাতিত হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষন ৪, গনধর্ষন ১, ধর্ষণের চেষ্টা ৪, যৌননির্যাতন ৪, হত্যার চেষ্টা ১, আত্মহত্যা ৬, আত্মহত্যার চেষ্টা ১, অপহরণ ১, নিখোঁজ ২, নির্যাতন ৬ জন কন্যা শিশু।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অনেক এলাকাতেই এখনো ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রচলন আছে। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলেই মেয়েদের জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেন অভিভাবকরা। কম বয়সীদের ১৮ বছর বা তার বেশি দেখিয়ে নিবন্ধন করানো হয় বা নানা ছলচাতুরির করে বিয়ের ব্যবস্থা করে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়ার অভিযোগও আছে কিছু স্থানে। পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ নিবন্ধন ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয় বলে সেসব বাল্যবিয়ে রোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাল্যবিয়ের খবর শোনামাত্র তা ঠেকানোর উদ্যোগ নেন। তবে সেসব ক্ষেত্রে বিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হলেও পরবর্তী সময়ে গোপনে আবারও ব্যবস্থা করেন অভিভাবকরা।
লফসের নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম বাড়াতে হবে। যৌন ও প্রজনন শিক্ষাসহ মানসম্পন্ন শিক্ষায় বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে।
লিঙ্গবৈষম্য ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে এবং নারীর জন্য উপযুক্ত কাজ ও কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের জন্য এমন ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করতে হবে, যা তাদের অধিকার।